কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
চা–শ্রমিকের শিশুসন্তান লিটন বুনারজি (৮)। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে সে দেখে, ঘরের মেঝেতে তার মা সারি বুনারজি (৩৮) পড়ে আছেন। বেশ কিছু সময় ডাকাডাকি করলেও মা সাড়া দিচ্ছিলেন না। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে শিশুটি দেখে, রাস্তায় পড়ে আছেন তার বাবা দিলীপ বুনারজি (৪৭)। ডাকাডাকি করে তাঁরও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানায় সে। তাঁরা গিয়ে দেখেন, দুজনই মারা গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের ফুলতলা চা-বাগানের এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগানে এ ঘটনা ঘটে।
সারি বুনারজি ও দিলীপ বুনারজির বাড়ি এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগানের ১২ নম্বর লাইনে। সারি বাগানের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ঢাকায় একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। মেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে একই বাগানে দাদার বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে লিটন মা-বাবার সঙ্গে থাকত।
এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হরগোবিন্দ গোস্বামী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দিলীপ বুনারজি স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া ছোট একটি ঘরে থাকতেন। সকাল নয়টার দিকে তাঁদের ছেলে লিটনের ঘুম ভাঙে। এ সময় মাকে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ‘মা, মা’ বলে ডাকতে থাকে। এরপর বাবাকে খুঁজতে গিয়ে তাঁকে বাড়ির সামনের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে। তাঁকেও ডেকে কোনো সাড়া পায়নি। এরপর সে (লিটন) দৌড়ে গিয়ে প্রতিবেশীদের ঘটনাটি জানায়। দিলীপ বুনারজিদের বাড়ি বাগানের অন্য শ্রমিকদের বাড়ি থেকে একটু দূরে পড়েছে। নইলে আরও আগে স্থানীয় লোকজন খবরটি জানতে পারতেন। বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়।
শিশু লিটনের দেওয়া ভাষ্যের বরাত দিয়ে হরগোবিন্দ গোস্বামী বলেন, মা-বাবার মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি হতে সে দেখেনি। শুক্রবার রাতে সবাই মিলে খাবার খেয়ে খাটে ঘুমিয়ে পড়ে।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া বেলা সোয়া একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, দিলীপ বুনারজি ও তাঁর স্ত্রী সারি বুনারজি বিষপানে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় তাঁদের মুখে দুর্গন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁদের বসতঘরের সামনে বিষের একটি খালি বোতলও পড়ে থাকতে দেখা যায়। কী কারণে ঘটনাটি ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের লাশ মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।