নিজস্ব প্রতিবেদক:
নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে সিলেটের দুই পর্যটন এলাকায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা অভিযানে সাদা পাথর থেকে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয় এবং জাফলংয়ে পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত ১০০ টি নৌকা ভাঙচুর করা হয়।
জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাদাপাথর ও আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়।
এ সময় সাদাপাথরের পাশের কালাইরাগ এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এসব পাথর আবার সাদাপাথরে রাখা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কলাবাড়ি এলাকায় পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সহায়তা করে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যতটুকু পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে, তারা ততটুকু পর্যন্ত গেছে।
একইভাবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের বল্লাঘাট, ঝুমপাহাড় ও জিরো পয়েন্ট এলাকায়ও বুধবার বেলা একটা থেকে চারটা পর্যন্ত অবৈধ পাথর ও বালু উত্তোলন ঠেকাতে অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার পলি রানী দেব।
অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযানে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ১০০টি বারকি নৌকা ভেঙে ফেলা হয়। পাশাপাশি অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১৩০ ফুট বালু জব্দ করা হয়।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার পলি রানী দেব বলেন, জাফলংয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের যুক্ত প্রায় ১০০টি নৌকা আটক করে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন রোধে সিলেট জেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২০ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ থাকা সিলেটের সব কটি পাথর কোয়ারিতে গণলুট শুরু হয়। কয়েক হাজার পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ লুটপাট চলে বলে অভিযোগ। তখন অন্যান্য পাথর কোয়ারিতে গণলুট চললেও তুলনামূলকভাবে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে লুটপাট কম হয়। তবে গত ২৩ এপ্রিল থেকে সাদাপাথর এলাকায় আবার পাথর লুট শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ দেদার লুটপাট চালিয়ে এলাকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদের উৎসমুখেই সাদাপাথরের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে এ পর্যটনকেন্দ্র। ছোট-বড় অসংখ্য পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতোধারা এ পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমান। এখন পাথর লুট হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা হতাশ।