এমএ রহিম
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ আসন। এই দুইটি উপজেলা নানান কারণে ঐতিহ্যবাহী। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও পিছিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এই দুইটি উপজেলায় আজো উন্নয়ন হয়নি পরিকল্পিতভাবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। এই ক্ষোভের অবসান ঘটাতে চান সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। বিএনপি ক্ষমতায় এলে উপজেলা দুইটি পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে তুলতে চান তিনি। ওই স্বপ্ন তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত। এই দুইটি উপজেলা নিয়ে অনেক অনেক স্বপ্ন দেখে আসছেন রাজনৈতিক জীবনের প্রথম থেকেই। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এবার সেইসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন এমরান চৌধুরী। প্রথমেই তিনি দুইটি উপজেলায় সরকারিভাবে দুইটি সবুজকুঞ্জ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনার ছকে কাজ করছেন। শুধু দেশ নয় বিদেশের মাটিতেও সবুজকুঞ্জ গ্রাম দুটিকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। গ্রাম দুটিকে সবুজ বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। সংক্ষিপ্তভাবে সবুজকুঞ্জ এর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এমরান চৌধুরী।
সবুজকুঞ্জ গ্রামের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে জানতে চাইলে এমরান চৌধুরী বলেন, এখানে মৌলিক শিক্ষা, পর্যাপ্ত পানি, সুস্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনের সুযোগ থাকবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক হবে। সবুজকুঞ্জ হবে নির্ধারিত এলাকায় বিশাল আয়তন নিয়ে। এখানকার বৈশিষ্ট্য হবে স্বতন্ত্র। এই সবুজকুঞ্জের নিজস্ব নীতিমালা থাকবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ও পরিবেশকে টেকসই করতে যা যা করতে হবে তার সবই করা হবে। সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। থাকবে নিজস্ব সপিংমল। সবুজকুঞ্জের নির্মাণ শৈলিও হবে ব্যতিক্রম। এখানকার প্রতিটি ভবন হবে সাদা। নানান জাতের গাছগাছালি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে সবুজকুঞ্জ। সবুজকুঞ্জ তৈরিতে রয়েছে আরো নানান ধরণের পরিকল্পনা।
সবুজকুঞ্জের নীতিমালা সম্পর্কে এমরান চৌধুরী যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টানেন। তিনি উল্লেখ করেন ‘ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে গ্রাম সবুজ শব্দটির একটি নির্দিষ্ট আইনি অর্থ রয়েছে এবং এর মধ্যে কম প্রচলিত শব্দ ” শহর সবুজ” ও অন্তর্ভুক্ত। গ্রামাঞ্চল এবং পথের অধিকার আইন ২০০০ দ্বারা সংশোধিত কমন্স রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৬৫- এ শহর এবং গ্রামের সবুজকে ” ভূমি” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল: যা কোনও আইন দ্বারা বা তার অধীনে কোনও এলাকার বাসিন্দাদের অনুশীলন বা বিনোদনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।’ অনুরূপ সবুজকুঞ্জ গ্রাম ২টি গড়ে তুলতে একটি শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সবুজকুঞ্জ হবে একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। যা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে আরও টেকসই হবে। বাসিন্দাদের ইচ্ছাকৃত ভৌত নকশা এবং আচরণগত পছন্দের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর সম্ভাব্য সর্বনিম্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করবে। এই গ্রামের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজাইন করা হবে।
এমরান চৌধুরী বলেন, একটি অসাধারণ গ্রামীণ সবুজের ধারণা হলো একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘাসযুক্ত এলাকা। যেখানে উৎসব এবং গ্রামের কার্যকলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, সবুজের সমারোহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামেরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ছবির মতন গ্রামগুলো সৃষ্টিকর্তা যেন এঁকেছেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। সব গ্রামেই চালতা, বেলী, নয়নতারা, কলমি, কামিনী, অপরাজিতা, কাঠালচাঁপা, দোলনচাঁপা, শিমুল, ঝুমকো জবা, শাপলা, জারুল, ঘাসফুল সহ হাজারো প্রকৃতির ফুল গ্রামগুলোর আনাচে-কানাচে, ঝোপে-ঝাড়ে শোভাবর্ধন করে আপন মহিমায়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় শালিক, ময়না, টিয়া, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, বক, বউ কথা কও, তিতির, চখাচখি, কাঠঠোকড়া, মোহনচূড়া, মাছরাঙা, পাপিয়া, ফিঙে, তোতা সহ হাজারের কাছাকাছি প্রজাতির পাখি। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জাম, করমচা, নারিকেল, সুপারি তাল সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ আর লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা গ্রামগুলোর মোহনীয়তাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। দেশের যেকোনো গ্রামে বাঁশঝাড় কিংবা বটের ছায়ায় বসে পাখির কিচির-মিচিরের সাথে একটি লগ্ন আপনার হৃদয়কে হাজার বছর বাঁচার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশের গ্রামগুলো নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঢাকা থাকলেও বাংলাদেশে গ্রাম পর্যটনের কোনো কার্যকর ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এখনো। যার ফলে দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যাচ্ছে গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর জীবন বৈচিত্র। নগরায়নের প্রভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য। তারপরেও সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে টিকে থাকা গ্রামীণ সৌন্দর্যকে আমরা চাইলেই উপভোগ করতে পারি। নিশ্চিন্তে হারিয়ে যেতে পারি প্রকৃতির কোলে। গ্রামগুলো বেঁচে থাকুক তার আপন মহিমায়। অতুলনীয় সৌন্দর্য, বৈচিত্র আর ঐতিহ্যগুলোও টিকে থাকুক প্রজন্মের অহংকার হয়ে। সবুজকুঞ্জের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলারও ইচ্ছে রয়েছে -এমনটি জানালেন এমরান আহমদ চৌধুরী। যা বাংলার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে।